খাদ্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে দ্রব্যমূল্য বাড়াতে না পারে সে বিষয়ে সরকার সচেষ্ট আছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে, চট্টগ্রামের মাদারবাড়িতে টিসিবি’র পণ্য বিক্রয় কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালে রাখতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
রমজানের আগে সরকার নিত্যপণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে দেবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যেসব নিত্যপণ্য আছে, সেগুলোর মূল্য নির্ধারণ করার ক্ষমতা সরকারের আছে। যেসব নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য আছে, ট্যারিফ কমিশনের মাধ্যমে সেগুলোর মূল্য নির্ধারণ করে আগামী সপ্তাহের মধ্যে আমরা জানিয়ে দেব।’
অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আছে, এরা সবসময় থাকবে। যারা ব্যক্তিস্বার্থে কাজ করে, মানুষের দুঃখকে পুঁজি করে ব্যবসা করতে চায়। সেইসব মজুতদারের বিরুদ্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শক্ত অবস্থান ঘোষণা করেছেন। প্রশাসনকে অনুরোধ করব, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে কোনো ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বা কেউ যেন কোনো কারসাজি করার সুযোগ না পায়। আমাদের সচেতন থাকতে হবে, তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীরা কোনোভাবেই খাদ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্য যেন বাড়াতে না পারে, সেজন্য সচেষ্ট থাকতে হবে।’
মূল্য তালিকা প্রচারের আহ্বান জানিয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পণ্য সরবরাহ ঠিক না থাকলে দাম বাড়বে, এটাই বাজারের ধর্ম। কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বসে বাজার সম্পর্কিত তথ্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অপপ্রচার রোধে বড় হাতিয়ার হচ্ছে যৌক্তিক মূল্য তালিকা প্রচার।’
তিনি বলেন, খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরাও বললেন, যখন আমরা (সরকার) ট্যাক্স কমিয়ে দিই, তখন তারা সময় মতো সাপ্লাই দেয় না। কোনো মিল যদি সাপ্লাই বন্ধ করে, তার গেইট বন্ধ হয়ে যাবে, আমি দায়িত্ব নিয়ে বললাম। সরবরাহে যদি কেউ অন্তরায় সৃষ্টি করে, পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, হয় ভালোভাবে ব্যবসা করতে হবে, নয়তো আমদানিকারক যত শক্তিশালীই হোক, ওই দোকান বন্ধ হয়ে যাবে।’
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের ভাষ্যমতে সাপ্লাই চেইন নিয়ন্ত্রণ করে আমদানিককারক ও মিল মালিকরা। আপনাদের দায়িত্ব হলো কার কার কারণে সাপ্লাই চেইনে সমস্যা হচ্ছে সে খবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানানো। কিন্তু আপনারা সেটা করেন না। পণ্যের সঠিক মূল্য তালিকা উপস্থাপন করলে ভোক্তা অধিদফতর আপনাদের হয়রানি করবে না।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশ কিংবা ভোক্তা অধিকার দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কখনো সম্ভব নয়। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে প্রয়োজন অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ ও পণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে। যদি কৃষক পণ্যের দাম কম পায়, সে পণ্যের উৎপাদন কমিয়ে দেবে। এতে পণ্যের সরবরাহ কমে যাবে এবং দাম বাড়বে। সুতরাং পণ্যের যৌক্তিক মূল্য নিশ্চিত করতে হবে।’
খাতুনগঞ্জের ঐতিহ্য ধরে রাখার আহ্বান জানিয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘খাতুনগঞ্জের পুরনো ঐতিহ্য আছে। এখানকার ব্যবসায়ীরা শত শত বছর ধরে সুনামের সঙ্গে সারাদেশে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করছে। আমি চাই, খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা সেই ঐতিহ্য ধরে রাখুক। একটা খাতুনগঞ্জ গড়ে উঠতে শত শত বছর লেগেছে। কিন্তু ধ্বংস করতে সাতদিনও লাগবে না। সুতরাং ব্যবসায়ীদের বলব, স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যবসা করতে হবে। পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আগে আমাদের দেশে জাহাজের মালিক ছিল না। এখন অনেকেই জাহাজের মালিক হয়েছেন। অনেক সময় দেখা যায়, যিনি জাহাজের মালিক, তিনিই আবার মিলের মালিক, আবার তিনি নিজেই সরাসরি ভোক্তাপর্যায়ে পণ্য পৌঁছে দিচ্ছেন।’
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘৭ জানুয়ারি নির্বাচন হয়েছে। ৩ জানুয়ারি থেকে চাল ব্যবসায়ীরা (মিল মালিক) বাজারে চাল সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন। আমি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েই ঢাকার মোহাম্মদপুর বাজারে গেলাম। দেখলাম, তারা মণপ্রতি ২০০-৩০০ টাকা বাড়িয়ে বাজারে সরবরাহ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে প্রতিযোগিতা থাকবে, প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ হবে। প্রতিযোগিতা না থাকলে বাজারে পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাওয়া যায় না। টিসিবি প্রয়োজনে নিজে আমদানি করবে, আমদানি করে বাজারে সরবরাহ ঠিক রাখবে। এসেনশিয়াল কমোডিটি নিয়ে সরকার কারও কাছে জিম্মি হতে চায় না, কাউকে জিম্মিও করতে দেবে না।’